বাঁধাকপির বৈজ্ঞানিক নাম Brassica oleracea। এটি Cruciferae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। সবজি রূপে বাংলাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা আছে। এটি বিদেশে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
ইউরোপে মূলত বাঁধাকপি এর উৎপত্তি। বাঁধাকপি একটি রসালো অঙ্গ বিশিষ্ট উদ্ভিদ। বাঁধাকপির প্রথমের দিকে পাতা ছড়ানো থাকে তারপরে আস্তে আস্তে সেটি বড় হতে থাকলে এক সময় সব পাতাগুলো এক জায়গায় ঠাসাঠাসি করে একটি গোলাকার অঙ্গ তৈরি করে।
- বাঁধাকপি কিভাবে চাষ করে?
- বাঁধাকপির মাথা হয় না কেন?
- বাঁধাকপি চাষে কোন সার ভালো?
- বাঁধাকপির বীজের হার কত?
সব কয়টি প্রশ্নের উত্তর আপনি পাবেন এই পস্টের মধ্যে। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আর কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে বা ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে জানাতে পারেন।
বাঁধাকপি কেন চাষ করবেন
পুষ্টিমানের দিক থেকে বাঁধাকপি একটি উৎকৃষ্ট সবজি । বিভিন্ন দেশে বাঁধাকপির নানা রকম ব্যবহার রয়েছে যেমন সালাদ তৈরিতে, পশু খাদ্য তৈরিতে ইত্যাদি। বাংলাদেশ এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। ব্যবহারের বৈচিত্রতা আনতে পারলে একটি জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পাবে। এবং সম্ভাবনা এর নতুন দ্বার উন্মচিত হবে।
বাঁধাকপি আমাদের স্বাস্থ্যের যে উপকারগুলো করতে পারে (বাঁধাকপির পুষ্টিগুন)
১। রক্তচাপ কমাতে পারে।
২। রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে পারে।
৩। হজমে সাহায্য করে ।
৪। ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে ।
৫। হাড়ের গঠন শক্ত করে ইত্যাদি ।
এক বিঘা জমি থেকে প্রতি সিজনে ৩৫-৪৫ হাজার টাকা লাভ করা যায়।
বাঁধাকপির বিভিন্ন জাত
মৌসুমির কখন লাগানো হয় তার উপর ভিত্তি করে বাঁধাকপি কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১। আগাম জাত:
উদাহরণঃ হরবিনজার, গোল্ডেন একর, কুপেন হেগেন মার্কেট ইত্যাদি।
২। মাঝ মৌসুমী জাত:
উদাহরণঃ গ্লোব, অল সিজন, সাকসেশন ইত্যাদি।
৩। নাবি জাত:
উদাহরণঃ ডেনিস ,বল হেড ,টাইটান ইত্যাদি।
কিছু সংকট জাত আছে যেগুলো জাপান থেকে আনা হয়েছে। যথাঃ K-k ক্রস, K-yy ক্রস।
বাঁধাকপি চাষের জন্য আবহাওয়া এবং মাটি কেমন হওয়া প্রয়োজন
শীতল-আর্দ্র জলবায়ুতে এটি সবচেয়ে ভালো হয়। এটি দোআঁশ মাটি এবং বেলে দোস মাটিতে সবচেয়ে ভালো হয়। মাটির অম্লমান ৬ থেকে ৬.৫ হলে ভালো। তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে এটি ভালো ফলন দেয়।
বাঁধাকপি চাষাবাদ পদ্ধতি
বাঁধাকপি বীজের মাধ্যমে অথবা শিকড় কলম থেকেও নতুন গাছ জন্মাতে পারে।
বাঁধাকপির বীজ বপণের সময়:
সেপ্টেম্বর হতে ডিসেম্বর মাস।
জমি প্রস্তুত
খোলামেলা উঁচু আলো বাতাস পূর্ণ জমি বাঁধাকপি চাষের জন্য উত্তম। বীজ বপনের একমাস আগে থেকে জমির প্রস্তুত করতে হয়। ভালোভাবে ভালোভাবে চাষ দিয়ে মই দিতে হয়। জমিতে আগাছা থাকলে আগাছা উঠিয়ে ফেলতে হবে।
বীজ বপন
বীজ মূলত বীজতলায় বপন করা হয়। একটি আদর্শ বীচতলার পরিমাপ হচ্ছে দৈর্ঘ্য ৩ মিটার প্রস্থ ১ মিটার। পাশাপাশি এবং বিশটি বীজতলা তৈরি করতে হয়। একই করবা তিন বিঘা জমির জন্য বীজতলায় ২৫০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়।
বাঁধাকপি চারা রোপন
চারা বীজতলা থেকে এনে মূল জমিতে লাগাতে হয়। চারা থেকে চারা দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি। এভাবে পুরো জমিতে চারা লাগাতে হবে। চারা বিকেলে লাগানো উত্তম।
বাঁধাকপি চাষে সার প্রয়োগ
প্রতি হেক্টর বা আড়াই বিঘা জমিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও সময় নিচে দেওয়া হল।
১। ইউরিয়া সার-
চারা লাগানোর ৭ দিন পর ১৫০ কেজি। চারা লাগানোর ২০ দিন পর আবার ১৫০ কেজি। চারা লাগানোর ৩০ দিন পর আবারো ১৫০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে (প্রতি হেক্টর বা আড়াই বিঘা জমিতে)
২। টিএসপি-
জমি প্রস্তুত করার সময় শেষবার চাষ দিয়ে ২০০ কেজি টিএসপি ছিটিয়ে দিতে হবে।
৩। এমওপি-
প্রথম ডোজ জমি প্রস্তুত করার সময় শেষ চাষ দিয়ে ১৫০ কেজি এবং দ্বিতীয় ডোজ চারা লাগানোর ৩০ দিন পর ১০০ কেজি এমওপি ছিটিয়ে দিতে হবে(এক হেক্টর বা আড়াই বিঘা জমিতে)
৪। জিপসাম-
জমি প্রস্তুত এর সময় শেষ চাষ দেয়ার পর ১০০ কেজি জিপসাম প্রয়োগ করতে হয়।
৫।জিংক সালফেট-
শেষ চাষের সময় ১০ কেজি জমিতে ছিটিয়ে দিতে হয়।
৬। সরিষার খৈল-
শেষ চাষের সময় ৫০০ কেজি পুরো জমিতে ছিটিয়ে দিতে হয়।
৭। গোবর-
শেষ চাষের সময় ১৫ টন গোবর পুরো জমিতে দিয়ে দিতে হয়।
বাঁধাকপি গাছের পরিচর্যা
মাঝে মাঝে জমি থেকে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। রোগাক্রান্ত কোন গাছ দেখলে উঠে ফেলতে হবে। গাছে ঘন ঘন সেচ দিতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছে পড়ে পানি জমে না থাকে। গাছ বেড়ে ওঠার সাথে সাথে সে চেয়ে ঘনত্ব বাড়াতে হবে খেয়াল রাখতে হবে মাটি যেন কখনো শুকিয়ে না যায়।
বাঁধাকপির রোগ-বালাই ও পোকামাকড় নিবারণ ব্যবস্থা
রোগ ব্যবস্থাপনা
পাতার দাগ পড়া রোগ
কালো দুর্গন্ধযুক্ত রোগ
চারা ধ্বসা রোগ
বাঁধাকপির পোকামাকড় ও প্রতিকার
বাঁধা কপির মাথা খেকো লেদা পোকা
বাঁধা কপির সরুই পোকা
কাটুই পোকা
বাঁধাকপি সংগ্রহ
বাঁধাকপি রোপণের ৯০- ১২০দিন পরে কাটার জন্য প্রস্তুত। মাথা শক্ত এবং পরিপক্ক হলেই বাঁধাকপি তাড়াতাড়ি কাটা উচিত। কাটাতে দেরি করলে বাঁধা কপির মাথা বিভক্ত হতে পারে এবং ক্ষেতের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
এক বিঘা জমি থেকে প্রতি সিজনে ৩৫-৪৫ হাজার টাকা লাভ করা যায়।
বাঁধাকপি চাষ সম্পর্কিত তথ্য এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার উপকারে আসবে। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন বা আমাদের ফেসবুক পেজ সহজ কৃষিতে মাসেজ দিতে পারেন। আমরা আশা করছি আমাদের এই সাইট খামারি ভাইদের অনেক উপকারে আসবে। আপনারা কমেন্ট ও শেয়ার করে আমাদের পাশে থাকুন আমাদের উৎসাহ দিন।
আরো পড়ুন-